করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকে আমাদের দেশ লক-ডাউন করা হয়।লক-ডাউনের ফলে আমরা সবাই বাসায় বন্দী হয়ে পড়ি। দীর্ঘদিন লক-ডাউন থাকার কারনে আমরা সবাই অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। কারণ লক-ডাউনের এই সময়টা বেশিরভাগই কর্মহীন ভাবে কাটাচ্ছি। কিন্তু প্রয়োজন কিংবা অপ্রয়োজনে আমাদের বাহিরে থাকার অভ্যাসটাই আমাদের ঘরবন্দী থাকা অবস্থায় অতিষ্ঠ করে রেখেছে৷ ঠিক এই মুদ্রার উল্টো পিঠে অবস্থান করে একজন নারী, যে আমাদের প্রিয় ‘মা’। তিনি যদি গৃহিণী হন তবে সারাবছরই তার জন্য লক-ডাউন।
আর যদি চাকুরীজীবি হয় তবে বাকি সবার মতো লক-ডাউনে তাকে অতিষ্ঠ করতে পারে নি, কারণ তার এই চাকুরী এখনও বহাল আছে। সকাল থেকে শুরু করে এই কাজ শেষ হতে হতে কখনো রাত ১২ টাও বেজে যায়। আর তার ওপর আমাদের কত বাহানা, কত শখ আহ্লাদ তারা পূরণ করে। আমাদের ঘরে আটকে রাখার সে কি তাদের নিরন্তর চেষ্টা। আর যে ‘মা’ চাকুরীজীবী সে তো এই সময়টা পরিপূর্ণ ভাবে কাজে লাগাচ্ছে। অর্থাৎ প্রতিদিনের কাজ গুলো করার পাশাপাশি কিছু নতুনত্ব নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। এতো কষ্ট করার পরও প্রায় প্রতিদিনই খবরের কাগজ খুলতে দেখা যায়, করোনা সন্দেহে মা কে হাসপাতালে ফেলে রেখে গেছে সন্তান কিংবা করোনা সন্দেহে মা কে রাস্তা ফেলে গেছে সন্তান এবং পরে মা কে বাসায় নিতে তাদের অনিহা।কোনো মা এর প্রতি এতো অবহেলা! দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধারণ করেছি কি আজকে এই দিনটা দেখার জন্য! আচ্ছা কিছু প্রশ্ন করি, মা এর করোনা কিভাবে হলো? মা কি বাহিরে যায়? আর যদি যায়, তবে কার বা কাদের প্রয়োজনে যায়? নিশ্চয়ই মা নিজের প্রয়োজনে বাহিরে বের হয় নি। আর যদি বাসায় অবস্থান করে তবে করোনা কিভাবে হলো? প্রশ্নের উত্তর গুলো স্পষ্ট।
যে মা আমাদের জন্য এতো কষ্ট সহ্য করে তার প্রতি এতো অবহেলা কেন? এর উত্তর হয়তো এক এক ভাবে দেওয়া যায়। কেউ আবার উত্তর দিতে গিয়ে বলবে, তার মা তাকে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে পারে নি। কিন্তু তাদের এ কথার যৌক্তিকতা কতটুক? মা তো চেষ্টা করেছে ছেলেকে তার আঁচলে আগলে রাখতে। কিন্তু ছেলে যখন আঁচল ছেড়ে চলে গেছে তখন মা তার ছেলের জন্য দো’আ করেছে। কারণ এর থেকে বেশি কি বা করতে পারে সে। যদি করতেও যায় তবে সে তার ছেলের কাছে খারাপ হয়ে যায়। শুধু খারপই নয়, মাঝে মাঝে ছেলের নির্যাতনেরও স্বীকার হতে হয়। একটা সময় যখন মা অচল হয়ে ছেলের উপর নির্ভর হয়ে পরে তখন যেন ছেলে তার মায়ের সব বিসর্জন ভুলে গিয়ে মা কে গঙ্গা জলে ভাসিয়ে দেয়। তাই করোনা পরিস্থিতির এর সময় টা তে এই মানুষটিকে সময় দিন। তার কিছু কাজ করে তাকে সহযোগিতা করুন। অথবা তাকে বলুন, সারা বছর তো তুমি করলে আজকে আমি রান্না করি তুমি খেয়ে দেখো। যদিও মা তা করতে দিবে না, তবুও মা যখন এই কথা শুনবে তখন তার মুখে যে হাসি ফুটে উঠবে তা এক স্বর্গীয় হাসি। আপনি যদি এই হাসি উপলব্ধি করতে পারেন তবেই আপনার এই বন্দী দশা সুখকর হবে।‘মা’ আপনার জননী। একটা কথা মনে রাখবেন আপনার করোনার হলে সবার আগে আপনার মা কে আপনি পাশে পাবেন। এবং এটাও মনে রাখা উচিত প্রয়োজনীয় সাবধানতা অবলম্বন করে করোনা আক্রান্ত রোগীকে সেবা করলে আপনার করোনা হবে না। মনে রাখবেন, সৃষ্টিকর্তা আপনাকে এই রোগে সংক্রামিত না করলে, কেউ আপনাকে সংক্রামিত করতে পারবে না। তাই যে মা এর পায়ের নিচে আপনার বেহেশত দিছে সেই মাকে অবহেলা না করে তাকে ভালোবাসুন। নশ্বর এর পৃথিবীতে মা এর থেকে আপন কেউ নাই।
-রাকিব শাওন ( হিউম্যান রিসোর্স ডেভলপার অফ ইয়ুথ মুভমেন্টস)
Recent Comments