সম্ভবত তখন ক্লাস সেভেন এ পড়ি, সন্ধ্যা হলেই পড়তে বসা পরিবার এর একটা কঠোর নিয়ম৷ সে সময়টাতে আব্বু আসার জন্য সন্ধ্যায় অপেক্ষা করতাম কখন আসবে আসলে আমরা পড়া ছেড়ে একটু ঊঠবো। এবং আমাদের জন্য নাস্তা নিয়ে আসবে সেটা খাবো।
আব্বু আসলে সবার আগে ধরতাম আব্বুর ব্যাগ টা, না জানি আজ কি বিশেষ খাবার নিয়ে এসেছে। প্রতিদিন ই কিছু না কিছু থাকতো ব্যাগে। অফিসে ওভারটাইম করার জন্য যে নাস্তা টা দিত সেটা চুপ করে নিজে না খেয়ে ব্যাগে ভরে আমাদের জন্য নিয়ে আসতো আব্বু।
তারপর সে খাবার টা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করায় ব্যাস্ত হয়ে যেতাম, কখনো ভাবতাম না এই মানুষটা সারাদিন না খাওয়া। অফিস থেকে যে খাবার টা দিয়েছে তাও আমাদের জন্য নিয়ে এসেছে। ঈদে নিজে কিছু না কিনলেও বোনাসের সবগুলো টাকা আম্মুর হাতে তুলে দিয়ে আমাদের ইচ্ছেমতো কিনে দিতে বলতো সবসময়।
এই মানুষ টি বাবা। যিনি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিরলস পরিশ্রম করে যেতেন আমাদের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য।
আজ বাবা নেই, ৫ বছর হয়ে গেছে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে।
বাবা খুব আদর করতো আমায়। একদম প্রিয় একটা ছেলে ছিলাম আমি। খুব ভালো লাগতো আব্বুর হাতটাতে মাথা রেখে ঘুমুতে। খুব ভালো লাগতো পরিবারের সবার একসাথে বসে আড্ডা দেওয়ার মুহূর্ত গুলো। আব্বুর মুখে শুনা আমার প্রশংসা গুলো।
জ্বর হলে মাথার পাশে সারারাত না ঘুমিয়ে বসে থাকা মানুষটাকে কখনো বলা হয় নি অনেক ভালোবাসি বাবা তোমায়। আজ চাইলে বলতে পারি না। বলতে পারি না, বাবা তোমাকে কতটা ভালোবাসি। তুমি যখন ছিলে তখন একবার অনুভব করি নি তোমার কষ্ট। আজ যখন তুমি নেই তখন বুঝতে পারি তোমার কষ্টগুলো, অনুভব করতে পারি আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা।
প্রত্যেক বাবাই এমন হয়। সব বাবারাই চেষ্টা করে তার সন্তানকে সুখে রাখার৷ তাই বাবা দিবস আমার জন্য একদিন নয় বরং প্রতিদিন। আমি আমার বাবাকে এখন আর বলতে পারি না, বাবা তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু আপনাদের যাদের বাবা আছে তারা বাবাকে বলতে পারেন, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে পারেন এবং তাঁর কষ্টটা অনুভব করতে পারেন। একবার বাবা কে বলেই দেখেন বাবা তোমাকে ভালোবাসি, তখন বাবার মুখে যে হাসি ফুটে উঠবে তা আপনি কোটি টাকা দিয়েও কিনতে পারবেন না।
নশ্বর এই পৃথিবীতে ভালো থাকুক প্রতিটি বাবা। আর আমার মতো যাদের বাবা নেই তাদের বাবা না হয় সৃষ্টিকর্তার কাছে ভালো থাকবে।
-আলি আফসার সায়র (কো অর্ডিনেটর লিভ উইথ ড্রিম)